প্রকাশিত: ১০/০২/২০১৭ ৯:৫৩ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া। সেই ত্রাণের একটি অংশ রাখাইনে চলমান বর্বরতা থেকে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারাও পাচ্ছেন। মালয়েশিয়া সরকারের পাঠানো ত্রাণবাহী জাহাজটি বর্তমানে ইয়াঙ্গুনে রয়েছে। আজকালের মধ্যে তা বাংলাদেশের পথে রওনা করবে এবং আগামী সপ্তাহের প্রথমার্ধে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজটি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় নোঙ্গর করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা। সেখান থেকে ত্রাণসামগ্রী বুঝে নেবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। রোহিঙ্গাদের মাঝে তা বণ্টনের দায়িত্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এবং বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। এ দু’টি সংস্থা বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী ত্রাণসামগ্রী বণ্টন করবে। এদিকে বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক (রোহিঙ্গা) বিষয়ক টাস্কফোর্সের সর্বশেষ সভা হয়েছে গতকাল। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের আনক্লজ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিন্স, আইওএম ও ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা  অংশ নেন। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে থাকা প্রায় ৩ লাখ অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক এবং সামপ্রতিক রাখাইন সংকটের কারণে নবাগত প্রায় ৬৬ হাজার রোহিঙ্গার ডাটাবেজ তৈরির চলমান কার্যক্রমের বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠানো মালয়েশিয়ার ত্রাণসামগ্রী বণ্টনের বিষয়েও আলোচনা হয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সরকারের ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ এবং বণ্টনের বিষয়ে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত জানাতে টাস্কফোর্সের সভা শেষে জরুরি (অনির্ধারিত) বৈঠক করতে সেগুনবাগিচায় যান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নুর আশিকিন বিনতে মোহাম্মদ তাইব। বিকাল ৩টা নাগাদ তিনি পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তার দপ্তরে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকের বিষয়ে সন্ধ্যায় এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, সচিব-হাইকমিশনার বৈঠকে মূলত রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ ও বণ্টন সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে হাইকমিশনার অবহিত হয়েছেন। এ জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা। মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বারনামা ও সিঙ্গাপুরের টিভি চ্যানেল নিউজ এশিয়া প্রকাশিত তথ্য মতে, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ২ হাজার ২০০ টন ত্রাণ বহনকারী ‘নটিক্যাল আলিয়া’ নামের জাহাজটি গত সপ্তাহে কুয়ালালামপুর থেকে ইয়াঙ্গুনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এটি চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝিতে ইয়াঙ্গুনে পৌঁছায়। সেখানে প্রায় ১০০০ টন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার কথা রয়েছে জানিয়ে ঢাকার এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে পৌঁছাবে। এরপর আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে ত্রাণ রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। সরকারের ওই কর্মকর্তা জানান, তাৎক্ষণিকভাবেই মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা। কিন্তু ওই জাহাজটি কোথায় নোঙ্গর করলে সহজে ত্রাণসামগ্রী খালাস করা যাবে তা বুঝতে কিছুটা সময় নেয়া হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় জাহাজটিকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়  নোঙ্গর করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে ত্রাণসামগ্রী  টেকনাফ ও উখিয়ায় পাঠানো হবে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামপ্রতিক বিবৃতির বরাত দিতে বারনামার খবরে জানানো হয়েছে, টেকনাফের আশেপাশে বসবাসরত শরণার্থীদের জন্য খাবার ও ওষুধ বিতরণের জন্য ওই জাহাজকে নোঙ্গরের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। জাহাজটি মিয়ানমারের পর বাংলাদেশে পৌঁছাবে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শহীদুল ইসলামের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমানের বৈঠক হয়েছে বলেও বারনামার সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, তুরস্কভিত্তিক তার্কি দিয়ানেত ভাকফি (টিডিভি) ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় পুতেরা ওয়ান মালয়েশিয়া ক্লাব ও মালয়েশিয়ান কনসালটেটিভ কাউন্সিল অব ইসলামিক অর্গানাইজেশন (এমএপিআইএম) রোহিঙ্গাদের জন্য জাহাজে করে ত্রাণ সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। ত্রাণ সরবরাহের জন্য জাহাজটিতে ১৩ দেশের প্রায় ২৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের কর্মী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও  বেসরকারি সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিও আছেন বলে জানানো হয়েছে। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের  গোলযোগপূর্ণ রাখাইন রাজ্যের অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীবাহী জাহাজ পাঠিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। রোহিঙ্গাদের দুর্দশাকে মালয়েশিয়া সরকার আমলে নিয়েছে এবং তাদের জন্য কাজেরও ব্যবস্থা করছে মালয়েশিয়া। দেশটির মুসলিম সংগঠনগুলোর পাশাপাশি দেশীয় এবং বিদেশি ত্রাণ সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণবাহী জাহাজের আয়োজন করেছে। এটি মিয়ানমারের সর্ববহৎ শহর ইয়াঙ্গুন হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাবে। ত্রাণবাহী জাহাজে খাবার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী রয়েছে। জাহাজটি তিনদিন বাংলাদেশের জলসীমায় থাকবে জানিয়ে রয়টার্সের খবরে বলা হয়  মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলিম  রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন নিয়ে প্রকাশ্যেই কড়া সমালোচনা করে আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। মিয়ানমার সরকারকে  রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে অং সান সূচির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার  রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সহিংসতার বেশির ভাগ খবরই অতিরঞ্জিত বলে মনে করে বর্মী সরকার। রাখাইন রাজ্যের সংঘাতকে দেশটির ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলেও মনে করে বর্মীরা। গত বছর ৯ই অক্টোবর মিয়ানমারের পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় ৯ পুলিশ নিহত হওয়ার পর থেকে রাখাইনে সংখ্যালঘু  রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চরম নিপীড়ন চালাচ্ছে দেশটির  সেনাবাহিনী। শুরুতে সেখানে শ’খানেক রোহিঙ্গাকে হত্যার খবর বের হলেও সমপ্রতি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রাখাইনে হাজারও রোহিঙ্গা হত্যার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। সেখানে ধর্ষিত হয়েছেন বহু রোহিঙ্গা নারী। জীবন বাঁচাতে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে উদ্বান্তু জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয় নিয়েছেন। মানবজমিন

পাঠকের মতামত

গহীন পাহাড়ে কঠোর প্রশিক্ষণ, যা বললেন কুকি চিনের আকিম বম

বান্দরবানে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী শাখার বান্দরবান সদর ও ...

নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন বর্জনে জেলা বিএনপির লিফলেট বিতরণ

বান্দরবান জেলার আসন্ন নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনে বান্দরবান জেলা বিএনপির দিনব‌্যাপি লিফলেট বিতরণ করা ...

নাইক্ষ‍্যংছড়ির গহিন অরণ্যে অভিযান, ৮টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার

বান্দরবানের নাইক্ষ‍্যংছড়ির গহিন অরণ্যে দুর্বৃত্তদের আস্তানায় হানা দিয়ে ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ...